বাংলাদেশে ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে মোবাইল ফোনের বাজার এবং ব্যবহার বিধিতে বড় পরিবর্তন আসছে।
সরকারের উদ্যোগ — National Equipment Identity Register (NEIR) — চালু হলে, অফিশিয়াল নয় এমন সব ফোন: অর্থাৎ অবৈধ, ক্লোন বা রিফারবিশড হ্যান্ডসেট — নেটওয়ার্কে চালু থাকবে না।
এর উদ্দেশ্য: অবৈধ আমদানি এবং ক্লোন ফোন বন্ধ করা; ডিজিটাল জালিয়াতি কমানো; দেশীয় হ্যান্ডসেট শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া; এবং মোবাইল-ব্যাংকিং, সাইবার প্রতারণা, সিম/ফোন-জালিয়াতি রোধ করা।
কী পরিবর্তন আসছে: নতুন নিয়ম ও নীতিমালা
- ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে, NEIR কার্যকর হবে। প্রতিটি হ্যান্ডসেটকে তার ১৫-সংখ্যার IMEI নম্বরের মাধ্যমে চেক করা হবে। নেটওয়ার্কে শুধু বৈধ ভাবে আমদানি বা উৎপাদিত ফোনই চলতে পারবে। অবৈধ, ক্লোন বা রিফারবিশড ফোন নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।
- ১৬ ডিসেম্বরের আগে যেসব ফোন ইতিমধ্যেই নেটওয়ার্কে সক্রিয়, সেগুলো আটকা পড়বে না।
- বিদেশ থেকে বা বিদেশ থেকে ফেরার সময় ব্যক্তিগত কাজে আনা ফোন, উপহার পাওয়া ফোন বা আগের ব্যবহৃত ফোন নিয়ে আসা হলেও — যদি সেগুলো বৈধ IMEI নম্বরসহ হয় এবং নিয়মিত রেজিস্ট্রেশন করা হয়, তবে চালু থাকবে। কিন্তু “ক্লোন / রিফারবিশড / চোর ফোন”–এর ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
- আমদানি-শুল্ক কমানোর পরিকল্পনা চলছে। সরকার বলছে, বৈধভাবে আমদানি করা বা অফিসিয়াল ফোনের শুল্ক ও ভ্যাট কমিয়ে দেশে বৈধ বাজার সম্প্রসারিত করবে।
মুঠোফোন কেনার আগে / বিদেশ থেকে ফোন আনতে চাইলে করণীয়
নিচে ধাপে ধাপে কীভাবে হবে:
- বৈধতা যাচাই
- বিক্রয়কেন্দ্র, অনলাইন, ই-কমার্স বা যেকোনো মাধ্যমে ফোন কেনার আগে প্রথমেই ফোনের IMEI নম্বর চেক করতে হবে।
- বিক্রেতার কাছ থেকে ক্রয় রশিদ (invoice/receipt) সংরক্ষণ করুন — ভবিষ্যতে প্রয়োজন হতে পারে।
- IMEI চেক করার পদ্ধতি
- ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখুন:
KYD <space> ১৫-সংখ্যার IMEI নম্বর(উদাহরণ:KYD 123456789012345)। তারপর ১৬০০২ নম্বরে পাঠান। এতে মোবাইল ফোন বৈধ কি না জানতে পারবেন।
- ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখুন:
- বিদেশ থেকে ফোন আনলে রেজিস্ট্রেশন
- যদি আপনি বিদেশ থেকে আসেন বা যেকোনোভাবে বিদেশি ফোন ব Ringate করেন — প্রথমে নেটওয়ার্কে কিছু দিন চলে যাবে। কিন্তু ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
- রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি: আপনার পাসপোর্ট (পাসপোর্টের তথ্য পাতার স্ক্যান/ফটো), ইমিগ্রেশনের সিলযুক্ত পাতা, ক্রয় রশিদ/রিসিট (যদি নতুন ফোন) বা উপহার-দাতার অনুমোদন (যদি উপহার), প্রযোজ্য হলে শুল্ক পরিশোধের রসিদ ইত্যাদি আপলোড করতে হবে।
- রেজিস্ট্রেশন হবে সাইট:
neir.btrc.gov.bd— সিটিজেন পোর্টাল। Special Registration সেকশন থেকে আবেদন করতে হবে।
- বিক্রি বা হস্তান্তর (Resell / Transfer) করলে কী হবে
- ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে, যদি আপনি আপনার রেজিস্টার্ড হ্যান্ডসেট বিক্রি বা অন্য কারো কাছে দেন — তাহলে ‘ডি-রেজিস্ট্রেশন’ করতে হবে। অর্থাৎ নতুন মালিকের NID বা যদি কেসিপি হয়, তার NID লাগবে। প্রক্রিয়া: সিটিজেন পোর্টাল, মোবাইল অপারেটর পোর্টাল বা *16161# ইউএসএসডি চ্যানেল।
- বিক্রয় রশিদ এবং রেজিস্ট্রেশন/ডি-রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত নথি সংরক্ষণ রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
কেন এই পরিবর্তন — সরকারের উদ্দেশ্য ও প্রভাব
- এমন অনুমান করা হয় যে — অবৈধ, ক্লোন বা চোর ফোন এবং অনিবন্ধিত সিম/ফোন থেকে হয় বেশিরভাগ ডিজিটাল প্রতারণা, সাইবার জালিয়াতি ও সিম-জালিয়াতি। NEIR এর মাধ্যমে, এমন ফোনগুলো চিহ্নিত করে ব্লক করা যাবে।
- এছাড়া, অবৈধ আমদানি বন্ধ করলে দেশীয় হ্যান্ডসেট উৎপাদন শিল্প (local handset manufacturing) উন্নত হবে — আরও বেশি চাকরি, উৎপাদন, এবং সাশ্রয়ী দামের বৈধ ফোন পাওয়া যাবে।
- দীর্ঘমেয়াদে, মোবাইল-ফিন্যান্স, ব্যাংকিং, সাইবার নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য — সবর ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সচেতন হওয়া জরুরি — কিছু ভুল ধারণা ও সতর্কবার্তা
- গুজব থেকে সাবধান থাকুন। ১৬ ডিসেম্বরের পরে শুধুই “নিবন্ধনবিহীন ফোন” বন্ধ হবে। বর্তমানে সক্রিয় ফোন (যা ১৬ ডিসেম্বরের আগে নিবন্ধন ছিল না) — সরাসরি বন্ধ হবে না।
- ক্লোন বা রিফারবিশড ফোন না কিনুন। এমন ফোন পেয়ে থাকলে, সেটা নেটওয়ার্কে চলবে না।
- বিক্রয়ের রশিদ সংরক্ষণ করুন। ভবিষ্যতে রেজিস্ট্রেশন বা ডি-রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় প্রমাণ হিসেবে লাগবে।
- বিদেশ থেকে ফোন আনলে রেজিস্ট্রেশন করবেন। উপহার বা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ফোন আনলেও রেজিস্ট্রেশন করতে হবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে, না হলে নেটওয়ার্কে কাজ হবে না।
আপনার জন্য করণীয়
- নতুন ফোন কেনার আগে নিশ্চিত করুন — কি সেটি বৈধ IMEI নম্বরসহ এবং রেজিস্ট্রেশনের উপযোগী।
- বিদেশ থেকে ফোন আনলে, রশিদ, পাসপোর্ট/ইমিগ্রেশন সিল, প্রয়োজ্য নথি রাখুন।
- রেজিস্ট্রেশন ও ডি-রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত তথ্য এবং রশিদ ভবিষ্যতের জন্য যত্নে রাখুন।
- অন্যকে ফোন বিক্রয় বা হস্তান্তর করার সময়, অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন আপডেট বা ডি-রেজিস্ট্রেশন করুন।