বিশ্বজুড়ে মোবাইল পেমেন্টের জনপ্রিয়তার মধ্যে Google Pay বা গুগল পে একটি পরিচিত নাম। অনেক দেশেই এই পরিষেবার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা মোবাইলে কয়েক সেকেন্ডেই পেমেন্ট করতে পারেন। তবে প্রশ্ন হলো – বাংলাদেশে গুগল পে দিয়ে আসলে কী করা যায়? এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমাদের বুঝতে হবে গুগল পে এবং গুগল ওয়ালেটের মধ্যে পার্থক্য এবং বাংলাদেশে এদের বর্তমান অবস্থা।
🔍 গুগল পে বনাম গুগল ওয়ালেট: কোনটা কী?
- Google Wallet মূলত একটি ডিজিটাল ওয়ালেট অ্যাপ, যেখানে আপনি আপনার ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, টিকিট, আইডি এবং পাস সেভ করে রাখতে পারেন।
- Google Pay হচ্ছে সেই প্রযুক্তি, যা এই ওয়ালেটে সেভ করা পেমেন্ট অপশন ব্যবহার করে অনলাইন বা POS (Point-of-Sale) মেশিনে পেমেন্ট করতে সহায়তা করে।
অর্থাৎ, Google Wallet হলো স্টোরেজ এবং Google Pay হলো ট্রানজ্যাকশন মাধ্যম।
✅ বাংলাদেশে গুগল পে কীভাবে কাজ করে?
বাংলাদেশে এখনো গুগল পে-এর সম্পূর্ণ সুবিধা চালু হয়নি। তবে City Bank তাদের গ্রাহকদের জন্য সীমিতভাবে এই সেবা নিয়ে এসেছে।
আপনি যা করতে পারবেন:
- সিটি ব্যাংকের আন্তর্জাতিক কার্ড থাকলে সেটি Google Wallet-এ যুক্ত করতে পারবেন।
- সেই কার্ড সংযুক্ত করার পর আপনি Tap-to-Pay বা NFC লেনদেন করতে পারবেন।
- এটি কেবলমাত্র সেসব POS টার্মিনালে কাজ করে যেগুলো NFC (Near Field Communication) সাপোর্ট করে।
আপনি যা করতে পারবেন না:
- QR স্ক্যান করে পেমেন্ট করা যাবে না
- স্থানীয় অনলাইন শপিং সাইটে পেমেন্ট করা যাবে না
- কাউকে মোবাইল নাম্বারে টাকা পাঠানো যাবে না
- ফান্ড ট্রান্সফার সুবিধা এখনো বন্ধ
📱 NFC ভিত্তিক লেনদেনের সুবিধা
গুগল ওয়ালেট অ্যাপে সিটি ব্যাংকের কার্ড যোগ করে আপনি NFC-সাপোর্টেড যেকোনো টার্মিনালে ফোন ট্যাপ করেই পেমেন্ট করতে পারবেন। এটি খুবই নিরাপদ এবং দ্রুতগতির একটি সিস্টেম।
যেহেতু এই পদ্ধতিতে কার্ড স্ক্যান বা ক্যাশের প্রয়োজন পড়ে না, তাই এটি:
- দ্রুত,
- এবং নিরাপদ।
বাংলাদেশে গুগল পে এখনো সীমিত
বাংলাদেশে Google Pay এখনো পরীক্ষামূলক অবস্থায় রয়েছে বলা চলে। শুধু একটি ব্যাংকের মাধ্যমে সীমিত সংখ্যক ব্যবহারকারীরা এটি ব্যবহার করতে পারছেন। QR, UPI, মোবাইল ট্রান্সফার কিংবা লোকাল অনলাইন শপিং – এ কোনো কিছুই এখনো গুগল পে’র আওতায় আসেনি।
তবে City Bank জানিয়েছে, ভবিষ্যতে ধাপে ধাপে অন্যান্য ব্যাংকের সাথেও গুগল পে ইন্টিগ্রেশনের পরিকল্পনা রয়েছে।
💡 ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি গুগল পে বাংলাদেশে সম্পূর্ণরূপে চালু হয় তাহলে এটি দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমে বিপ্লব আনতে পারে। বিশেষত নিচের ফিচারগুলো চালু হলে:
- QR কোড স্ক্যান করে পেমেন্ট
- মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে টাকা পাঠানো
- লোকাল ও আন্তর্জাতিক অনলাইন শপিংয়ে সরাসরি পেমেন্ট
- ইন-অ্যাপ সাবস্ক্রিপশন ও রিয়েল টাইম ব্যাংক ট্রান্সফার
এই সুবিধাগুলো গুগল পে’কে বিকাশ, নগদ বা রকেটের চেয়েও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে পারে।
🔚 উপসংহার
বাংলাদেশে গুগল পে এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং শুধুমাত্র City Bank-এর নির্দিষ্ট কার্ড ব্যবহারকারীরা NFC লেনদেনের সুবিধা পাচ্ছেন। তবে গুগল পে যদি ভবিষ্যতে QR পেমেন্ট, ফান্ড ট্রান্সফার, ও লোকাল শপিং সাপোর্ট নিয়ে আসে, তাহলে এটি আমাদের দেশের ডিজিটাল অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তন আনবে।